জীবন অনিশ্চিত তবুও সফল উদ্যোক্তা আরনিকা আল-আমিন

জীবন অনিশ্চিত তবুও সফল উদ্যোক্তা আরনিকা আল-আমিন

সফল ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা কখনও কাজ সম্পূর্ণ করতে অলসতা করেন না। তাদের হাতে যখন কোনো কাজ থাকে, তখন তারা দিন-রাত তাদের সম্পূর্ণ শ্রম এবং মেধা দিয়ে কাজটি পরিপূর্ণ করে থাকেন। কাজের ক্ষেত্রে তাদের কাছে অন্য সবকিছু গুরুত্বহীন মনে হয়। এ পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় তাদের ব্যর্থদের থেকে আলাদা করে থাকে। সফল উদ্যোক্তারা জানেন যে তাদের পক্ষে কী করা সম্ভব এবং কী করা সম্ভব নয়। তাই অন্যরা যখন কাজের ভয়ে না বলেন বা পারবেন না বলে কাজ পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন সফল ব্যক্তিরা তাদের সবকিছু বিবেচনা করেই সুযোগকে হ্যাঁ বলেন।

সংগ্রামী জীবন চেতনা শুরু হয় সেই শিশুকাল থেকেই। কারো কারো কাছে সেই সংগ্রাম হয়ে যায় কিছুটা কঠিন । কিন্তু তাতে কারও দোষের কিছু নয়। বিল গেটস বলেছেনঃ- গরিব ঘরে জন্মানো দোষের কিছু নয়, কিন্তু গরিব হয়ে মৃত্যুবরণ করাটা একটা অভিশাপ। আসলে গরিব তারা যারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু না করেই মারা যায়। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হয়েও ধনী হওয়া যায়।

আজ আমি আপনাদের সামনে এমন একজন উদ্যোক্তার কথা উপস্থাপন করব যে কিনা তার নিজের অনিশ্চিত জীবনের কথা চিন্তা না করে ভাবছে কিভাবে মানুষকে স্বাবলম্বী করা যায়। তিনি নেত্রকোনার একজন সফল উদ্যােক্তা আরনিকা আল-আমিন। হ্যাঁ, সত্যিই তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা । তার সম্পর্কে লিখলে তার জীবন বৃত্তান্ত লিখে শেষ করার নয়। কারন কারো জীবনের মহৎ গুনাবলি ও ত্যাগ নিয়ে আলোচনা করলে তা কখনো শেষ হবার নয়। তাই আমি আপনাদের সাথে একজন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোক্তাকে পরিচয় করিয়ে দেব।

আরনিকা আল-আমিন ও তার জীবন

আরনিকা আল-আমিন
আরনিকা আল-আমিন

কোন নাটক বা সিনেমার গল্প নয়। এটা নেত্রকোনার একজন কৃতি সন্তান সফল নারী উদ্যোক্তা আরনিকা আল-আমিন। অসুস্থতা কে জয় করে দেশি পন্য তাঁতশিল্পের জামদানী নিয়ে সফল উদ্যােক্তা নেত্রকোনার আরনিকা আল-আমিন। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে সে আরনিকা আল-আমিন নামেই পরিচিত এবং সে এই নামেই সাচ্ছন্দ্য ভোদ করেন। পরিবারের দেওয়া নাম (মারুফা আক্তার টুম্পা)। যদিও জন্মগত ৪টা হার্টের ফোঁটা নিয়ে আর হার্টের একটি (vlp) সমস্যা নিয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করে, ১১ বছর বয়েসে তার হার্টের সার্জারি হয়, দেশের বাহিরের ডাক্তার সহ জানিয়েছেন তার হার্টের (vlp) টি এখন পুনঃস্থাপন করা আর সম্ভব নয় । তিনি আল্লার রহমতে এভাবেই সবার মাঝে যত দিন ভালো থাকেন। কিছু দিন আগে আবার তার ব্রেইন স্টোক হয়, মস্তিষ্কে পাঁচ জায়গায় রক্ত ক্ষরণ হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে সুস্থ হইয়ে ফিরে আসেন। তার এই এত বড় অসুস্থতার মাঝেও তার ইচ্ছে শক্তি ছিল কিছু করার, শারিরীক অসুস্থতার জন্য লেখা পড়াও বেশি দূর করা হয় নি তার। তবুও সে ছোট বেলা থেকেই ভাবতো জীবনে কিছু একটা করবে। আর এমন কিছু করবে তাকে যেনো সবাই চিনে এবং সে তার নিজের পরিচিতি নিজেই তৈরি করবে। সেই ইচ্ছে থেকে তার উদ্যােক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু।

আরনিকা আল-আমিন ও তার সিগনেচার পন্য

তার উদ্যােক্তা জীবনের শুরু টা ছিল ২০১৯শে থেকে হোম মেইড হেয়ার ওয়েল দিয়ে, অতি মাত্রার পাওয়াফুল ওষুধে তার চুল পড়ে যাচ্ছিল বলে নিজেই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে হেয়ার ওয়েল তৈরি করে ব্যবহার করা শুরু করে এবং নিজেই উপকারিতা বুঝতে পারার পর ভাবলো বসে না থেকে নেট এর মাধ্যমে তার তৈরি হেয়ার ওয়েল সেল করতে পারলে মন্দ হয় না। সেই থেকে শুরু, নেত্রকোনায় উনি প্রথম হোম মেইড হেয়ার ওয়েল তৈরি করে সেল করা শুরু করেন ইতিমধ্যে নেত্রকোনা সহ সারা পেয়েছেন নেত্রকোনার বাইরেও। তার সিগনেচার পন্যঃ- আরনিকা স্পেশাল হেয়ার ওয়েলের ভাল নাম ডাক আছে এখন। ধীরে ধীরে দেশি পন্য জামদানী শাড়ি, পাঞ্জাবী নিয়েও কাজ শুরু করে এবং দেশি পন্য জামদানী শাড়ি পাঞ্জাবীতেও ভালো সারা পেয়েছেন দেশে এবং দেশের বাহিরেও।

আরনিকা স্পেশাল হেয়ার ওয়েল
আরনিকা স্পেশাল হেয়ার ওয়েল

আরনিকা আল-আমিন ও তার উদ্যােগ

তাই তিনি একসময় নিজের এলাকাকে নিয়ে ভাবতে থাকেন এবং কাজও শুরু করেন। তিনি নেত্রকোনা জন্য একটি জেলা ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ওপেন করেন নেত্রকোনার উদ্যােক্তাদের জন্য Netrakona Women and Men Entrepreneurs (NWE)। নেত্রকোনার উদ্যােক্তাদের জন্য তৈরি করেছেন একটি প্ল্যাটফর্ম। তার এই গ্রুপে নেত্রকোনার সকল উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেও উদ্যােক্তা এক্টিভ রয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন নেত্রকোনার হারিয়ে যাওয়া পন্য ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে এবং সকল উদ্যােক্তাদের এক সাথে ধরে রাখার জন্য তার এই (NWE) প্ল্যাটফর্ম। শারীরিক ভাবে এতটা অসুস্থ হওয়ার পরও মানসিক ভাবে একটি বারের জন্যও ভেঙে পরেন নি যিনি, হাস্যজ্বল মুখে আজ শত তরুণীর অনুপ্রেরণা যিনি তিনিই নেত্রকোনার ( NWE) এডমিন আরনিকা আল-আমিন।

এছাড়াও তিনি মহিলাদের জন্য (Art’s Of Arneka) আর্টস অফ আরনিকা তিনি আরও চালু করেন ” আর্টস অফ আরনিকার অংশ হিসেবে- নেত্রকোনার মায়ের হাতের রান্না,, হোম মেইড খাবারে উনার মা কেও উদ্যােক্তা হতে সাহায্য করেন ।মা কে না জানিয়েই একদিন হঠাৎ করে তার পেইজ ” আর্টস অফ আরনিকা তে তার মায়ের তৈরি আচারের ছবি পোস্ট করেন, সাথে সাথেই ৪০০ গ্রাম আচারের অর্ডার কনফার্ম হইয়ে যায় ব্যস সেই থেকে শুরু মায়ের হাতের রান্না ‘র হোম মেইড খাবার। তার ক্রেতাদের সুবিধা জন্য একি পেইজে তিনি খাবার সহ সব রাখেন। নেত্রকোনাতে হোম মেইড খাবারে বেশ নাম ডাক শুনা যায় এই ” আর্টস অফ আরনিকার মায়ের হাতের রান্নার। মেয়ের জন্য আজ মা মিসেস রিনা আক্তারও সফল উদ্যােক্তা।

আরনিকা আল-আমিনের উদ্যােক্তা হওয়ার যাত্রা

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন সফল উদ্যােক্তা হবে এবং বাবা-মাইয়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। তার উদ্যােক্তা হওয়ার ইচ্ছে পূর্ণ করার জন্য তার পরিবার সদস্যরা, তার হাসবেন্ড, মা, বাবা, বোনরা, রুপসা আন্টি তার (মম জি) শহিদ আংকেল সহ অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আরনিকা আল-আমিন, পিতা; মোঃ আব্দুল মান্নাফ। মাতা; রিনা আক্তার। স্বামী ; শরিফ উদ্দিন আল-আমিন। তার ইচ্ছে শক্তি দেখে সাফল্য দেখে তার পরিবারের সদস্যরা সহপাঠীরা সহ অবাকই বটে। তার পরিবার, বাবা, মা, জানায় সে খুব বেশি অসুস্থ না হলে কখনো বিছানায় পড়ে না খুবেই ইচ্ছে শক্তি সম্পূর্ণ মানুষ। সে এত বড় রোগ বহন করে এটা না বললে ওকে দেখে কেউ বুঝতে পারে না তার এত বড় রোগ সে পাত্তা দেয়া হাঁসি মুখে সবাই কে মাতিয়ে রাখে, আমাদের মেয়ে ছোট বেলা থেকেই অনেক সাহসী আর রাগ বেশি হলেও অনেক ভালো মনের একজন মানুষ সে। তার কিছু করার ইচ্ছে শক্তি দেখে আজ আমরা অনেক খুশি এবং মা,বাবা হিসাবে তাকে নিয়ে গর্ব হয়।

একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন

উদ্দক্তাদের জন্য আরনিকা আল-আমিন শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতে একটি দ্রষ্টান্তমুলক উদাহরন হয়ে থাকবে। চাইলে আপনিও হাজারো উদ্যোক্তার মনে অনুপ্রেরনা জাগাতে পারেন আরনিকা আল-আমিনের এই আর্টিকেলটি পড়ানোর মাধ্যমে। প্রতিটি উদ্যোক্তাই তাদের ব্যবসার আইডিয়া গুলো ভাল এই ধারণা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে থাকে। তারা সব ধারণা গুলোর একটি গুচ্ছ তৈরী করে এবং সফলতায় পৌাঁছানোর জন্য লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করে থাকে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে আপনি কি করে ব্যবসার ধারণা থেকে বড় সাফল্যে পৌঁছাবেন? আর এজন্য আপনাকে অব্যশ্যই আপনার লক্ষ্য বা স্বপ্ন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সকল উদ্যোক্তাকে কিছু সঠিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। প্রকৃত অর্থে সঠিক দিক নির্দেশনায়ই আপনি হতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

মাইনউদ্দিন সোহেল

আমি বর্তমানে একজন কন্টেন্ট রাইটার ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। আমি (২০১৪-১৫) সেশনে এইচএসসি ও (২০১৭-১৮) সেশনে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করি। পরবর্তীতে শখের বশে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখি।

Related Articles

3 Comments

  1. এগিয়ে যাও আপু, জীবন সবাইকেই ছেড়ে যাবে কিন্তু কয়জনই বা মানুষের জন্য কিছু করতে পারে

  2. অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো আরনিকা আলামিন আপু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button