প্যাসিভ ইনকাম

ব্লগিং করে আয় – বাংলা ব্লগিং এ মাসে কতো টাকা আয় করা যায়?

ইন্টারনেটের বিস্তার ও ডিজিটাল মাধ্যমের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে, ব্লগিং এখন শুধু একটি শখ নয়, বরং ব্লগিং করে আয় একটি প্রামাণিক উৎস হয়ে উঠেছে। অনেকেই ব্লগিং করে উপার্জন করছেন, কেউ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে, কেউ বা নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করছেন। এই নিবন্ধে আমরা জানবো কিভাবে ব্লগিং করে আয় করা যায়, কীভাবে একটি ব্লগ শুরু করবেন, এবং কিভাবে সফল হতে পারবেন।

এক নজরে

ব্লগিং কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

ব্লগিং হলো অনলাইন কনটেন্ট তৈরি এবং প্রকাশ করার একটি মাধ্যম। এটি সাধারণত একটি ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়, যেমন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পেশাগত জ্ঞান, টিউটোরিয়াল, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি। ব্লগিং গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি:

  • আগ্রহ ও দক্ষতা প্রকাশের সুযোগ: ব্লগিং আপনাকে আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা প্রকাশের সুযোগ দেয়।
  • নেটওয়ার্ক তৈরি: ব্লগের মাধ্যমে আপনি একই বিষয়ে আগ্রহী অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
  • আয়: ব্লগিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যায়।

ব্লগিং শুরু করার ধাপসমূহ

ক. একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করুন

আপনার ব্লগের একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা নিস (niche) নির্ধারণ করা জরুরি। এটি হতে পারে ফ্যাশন, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, খাবার, বা যেকোনো বিষয় যা সম্পর্কে আপনি লিখতে আগ্রহী এবং যা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান আছে।

খ. একটি ডোমেইন নাম এবং হোস্টিং নির্বাচন করুন

আপনার ব্লগের জন্য একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করুন যা সহজে মনে রাখা যায় এবং আপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। ডোমেইন নাম নির্বাচনের পরে, একটি নির্ভরযোগ্য হোস্টিং সেবা নির্বাচন করুন।

গ. ব্লগ প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন

ব্লগিং করার জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম আছে, যেমন WordPress, Blogger, Wix ইত্যাদি। WordPress সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহার করা সহজ, তাই শুরুতে এটি নির্বাচন করা একটি ভালো ধারণা।

ঘ. ব্লগের নকশা ও সেটআপ

আপনার ব্লগের একটি সুন্দর ও ব্যবহারকারী-বান্ধব নকশা নির্বাচন করুন। প্রয়োজনীয় প্লাগইন এবং উইজেট ইনস্টল করুন যা আপনার ব্লগের কার্যকারিতা বাড়াবে।

ঙ. নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করুন

নিয়মিত এবং মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করুন। আপনার পাঠকদের আগ্রহ ধরে রাখতে হলে আপনাকে ধারাবাহিকভাবে নতুন কনটেন্ট প্রকাশ করতে হবে।

বাংলা ব্লগিং এ মাসে কতো টাকা আয় করা যায়?

আমরা যখন কোথাও একটা কাজ করি, তখন আমাদের আগেই বলা হয় আপনি প্রতি মাসে এত টাকা পাবেন। কিন্তু ব্লগিং এর গল্পটা একটু ভিন্ন। ব্লগিং এমন একটি অনলাইন ব্যবসা যেখানে অনেক সফল মানুষ আছেন যারা প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা অর্থাৎ 1000 থেকে 1500 ডলার আয় করছেন।

একই সময়ে, আরও কিছু মানুষ রয়েছে যারা তাদের পুরো মাসে 100 ডলারও উপার্জন করতে সক্ষম হয় না। এর পেছনে একটা কারণ আছে, আর সেটা হল ট্রাফিক। ট্রাফিক সরাসরি সার্চ ইঞ্জিন থেকে আসে। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা ট্র্যাফিকের মাধ্যমে আমরা বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারি না।

কারণ অ্যাডসেন্স সেই ট্রাফিকের উপর খুব  কম CPC দেয় , যা প্রায় নগণ্য। তাই আমাদের সমস্ত ফোকাস সার্চ ইঞ্জিন ট্রাফিক বাড়ানোর দিকে হওয়া উচিত। শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিন ট্রাফিক সিদ্ধান্ত নেবে আপনি ব্লগ থেকে কত টাকা আয় করতে পারবেন। ব্লগে যত বেশি ট্রাফিক হবে, তত বেশি আয় হবে।

আপনাকে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এখানে একটি উদাহরণ দেব, যাতে আপনি অবশ্যই প্রতিটি ব্লগের আয় সম্পর্কে ধারণা পেতে সক্ষম হবেন। এর সাথে, আপনি এটিও জানতে পারবেন যে একজন বাংলা ব্লগার প্রতি মাসে কত উপার্জন করতে পারেন। চল শুরু করা যাক.

ধরুন আপনার ব্লগে প্রতিদিন 1000টি অর্গানিক ট্রাফিক আসছে। আপনি বাংলা ব্লগিং এ সাধারণ CPC পাবেন 0.03 গড়। এখন এর মধ্যে CTRও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। CTR মানে “ক্লিক থ্রু রেট”। যদি আপনার CTR 5% থেকে যায়, তাহলে 1000 জনের মধ্যে 50 জন ক্লিক করেছে।

1000 এর 5% হল চল্লিশ (50) মাত্র, তাই আপনার ক্লিক 50। আপনি প্রতি ক্লিকে $0.03 পাচ্ছেন। সুতরাং এই অনুযায়ী আপনার উপার্জন 50*0.03 = $1.50।

অর্থাৎ, যদি আপনার Multi Niche বাংলা ব্লগে দৈনিক 1000টি ট্রাফিক থাকে, তাহলে আপনি সহজেই এটি থেকে দৈনিক ন্যূনতম $1.50 উপার্জন করতে পারবেন। তাহলে ব্লগ থেকে কত টাকা পান, বুঝলেন? যদিও এটি সর্বনিম্ন, আপনার উপার্জন এর চেয়ে বেশি হতে পারে।

কারণ আপনার CTRও বেশি হতে পারে। এছাড়াও আপনার ব্লগে ডাইরেক্ট এবং রেফারেল ট্রাফিকও আসে, যাতে উপার্জন কম হলেও তা আছে।

সেই অনুযায়ী, 1000টি অর্গানিক সহ একটি মাল্টিনিচ ব্লগ সহজেই প্রতিদিন $2 আয় করতে পারে। এখন আপনি বলবেন যে এটি একটি বিশেষ উপার্জন নয়। তাই আমরা আপনাকে বলতে চাই যে আমরা 1000 ট্রাফিক সহ একটি ব্লগের শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিয়েছি। আপনি আপনার ব্লগে নিয়মিত পোস্ট করবেন।

যার ফলে আপনার  অর্গানিক ট্রাফিক বাড়বে এবং সেই সাথে আপনার আয়ও বাড়বে। ধরুন 2 বছর ধরে একটানা পরিশ্রম করে, আপনি আপনার ব্লগে প্রতিদিন 10000 ট্রাফিক করেছেন, তাহলে আপনার আয়ও প্রতিদিন $20 এর বেশি হবে, যা খুব ভাল।

যদি আপনার ব্লগ “Microniche” মানে “স্বাস্থ্য” বা “প্রযুক্তি” এর মত একটি বিষয়ের উপর তাহলে আপনি শুধুমাত্র প্রতিদিন 1000 ট্রাফিকের মাধ্যমে এর থেকে বেশি আয় করতে পারবেন। কারণ গুগল মাইক্রোনিচ ব্লগে হাই সিপিসি দেয়।  “Microniche” ব্লগের মাধ্যমে, আপনি একই পরিমাণ ট্রাফিকের মাধ্যমে প্রতিদিন $3 এর বেশি আয় করতে পারেন।

বিশ্বাস করুন, প্রতিদিন 10000 এর ট্রাফিক থাকা একটি বড় বিষয় নয়। অনেক  ব্লগার আছেন যাদের ট্রাফিক এর চেয়ে অনেক বেশি। আপনার ব্লগে ২-৩ বছর পরিশ্রম করুন, আপনার ট্রাফিকও এখানে পৌঁছে যাবে।

তাই বলা হয় ব্লগিং এ অর্থ উপার্জনের কোন সীমা নেই। এর থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবেন। যা দরকার তা হল সঠিক পথে ক্রমাগত কঠোর পরিশ্রম। আপনি যদি শুরু থেকে শুধুমাত্র টাকার পিছনে দৌড়ান, তাহলে আপনি ব্লগিংয়ে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।

ব্লগ প্রচার ও প্রসার

ক. এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন)

আপনার ব্লগ পোস্টগুলি সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র‌্যাংক করতে হলে এসইও কৌশল ব্যবহার করুন। কিওয়ার্ড রিসার্চ করুন এবং সেগুলি আপনার কনটেন্টে প্রয়োগ করুন।

খ. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করুন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনার ব্লগের প্রচার করুন।

গ. অতিথি পোস্টিং

অন্য জনপ্রিয় ব্লগে অতিথি পোস্ট লিখুন এবং সেখান থেকে ব্যাকলিংক পান। এটি আপনার ব্লগে ট্রাফিক বাড়াতে সাহায্য করবে।

বাংলা ব্লগিং এ মাসে কতো টাকা আয় করা যায়
বাংলা ব্লগিং এ মাসে কতো টাকা আয় করা যায়

ব্লগ থেকে আয় করার উপায়

ক. বিজ্ঞাপন

গুগল অ্যাডসেন্স বা অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করুন। আপনার ব্লগে ট্রাফিক বেশি হলে বিজ্ঞাপন থেকে ভালো আয় করতে পারবেন।

খ. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি পণ্য বা সেবার প্রচার করা এবং বিক্রয়ের উপর কমিশন অর্জন করা। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, শেয়ারএসেল, সিজে অ্যাফিলিয়েট ইত্যাদি প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন।

গ. স্পন্সরশিপ

যদি আপনার ব্লগে ভালো পরিমাণ ট্রাফিক থাকে, তবে বিভিন্ন কোম্পানি আপনাকে স্পন্সরশিপ দিতে পারে। স্পন্সরড পোস্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি করে আয় করা যায়।

ঘ. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়

ইবুক, অনলাইন কোর্স, প্রিন্টেবল ইত্যাদি ডিজিটাল প্রোডাক্ট তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন। এটি একটি সরাসরি আয়ের উৎস।

ঙ. পরিষেবা প্রদান

আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্স সার্ভিস প্রদান করতে পারেন। ওয়েব ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, এসইও কনসাল্টিং ইত্যাদি বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে আয় করা যায়।

ব্লগিং এর চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

ক. প্রতিযোগিতা

ব্লগিংয়ে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। নিজেকে আলাদা করতে হলে আপনাকে অনন্য ও মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।

খ. সময় ব্যবস্থাপনা

ব্লগিং সময় সাপেক্ষ হতে পারে। সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল রপ্ত করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে হবে।

গ. প্রযুক্তিগত সমস্যা

ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান করতে শিখতে হবে। না জানলে প্রফেশনাল হেল্প নিতে পারেন।

সফল ব্লগারের উদাহরণ

ক. হাফিংটন পোস্ট

এই ব্লগটি প্রথমে একটি ছোট ব্লগ হিসেবে শুরু হয়েছিল এবং এখন এটি একটি প্রধান সংবাদ ও মতামত ওয়েবসাইট।

খ. প্যাট ফ্লিন (Smart Passive Income)

প্যাট ফ্লিন একটি সফল ব্লগার যিনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং পডকাস্টিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন।

গ. নিল প্যাটেল (Neil Patel)

নিল প্যাটেল একজন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ যিনি তার ব্লগ এবং অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে বিশাল আয় করছেন।

উপসংহার

ব্লগিং করে আয় করা সম্ভব, তবে এটি সময়, পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যর প্রয়োজন। উপরের ধাপগুলি অনুসরণ করে আপনি একটি সফল ব্লগ তৈরি করতে পারেন এবং আয় শুরু করতে পারেন। নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি, এসইও কৌশল প্রয়োগ, এবং সামাজিক মিডিয়াতে প্রচার করলে আপনার ব্লগ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং আয়ের পথ প্রশস্ত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button